লিখিত পরীক্ষার নামে পছন্দের প্রার্থীকে বাছাই প্রক্রিয়া!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে যোগ্যদের বদলে পছন্দের প্রার্থীদের বাছাই করার জন্য লিখিত পরীক্ষার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, মেধাবী, ভালো রেজাল্টধারী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষা থেকে বাদ দিলে সমালোচনায় পড়তে হয়— সেজন্য মৌখিক পরীক্ষার আগে লিখিত থেকে মেধাবীদের বাদ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের নির্বাচিত করা হচ্ছে। পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় গোল্ড মেডেলিস্ট কিংবা ১ম শ্রেণিতে ১ম, ২য় মেধাধারীদের কৌশলে লিখিত পরীক্ষায় ফেল দেখানো হচ্ছে। এদিকে লিখিত পরীক্ষার ফলে নম্বর প্রকাশ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন প্রার্থী। তারা জানান, ভালো পরীক্ষা দিয়ে কীভাবে তারা ফেল করলেন— সেটাই তাদের প্রশ্ন। বিগত কয়েকটি শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের লিখিত পরীক্ষা বিশ্লেষণ করলে দেখা গেছে, গোল্ড মেডেলিস্ট কিংবা ১ম শ্রেণিতে ১ম, ২য় মেধাধারীদেরও ফেল করানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩ জুন ফার্মেসি বিভাগের নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে চারটি পদের বিপরীতে আবেদন করেন প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী। তাদের মধ্যে ৩১ জনকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। গত রবিবার অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় ৩১ জনের মধ্যে ২৫ জন প্রার্থী অংশ গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে ১৫ জনকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয়। বাকি ১০ জনকে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়। তবে কে কত মার্কস পেয়েছেন— বরাবরের মতোই তা প্রকাশ  করেনি নিয়োগ বোর্ড। অভিযোগ রয়েছে, তড়িঘড়ি করে এর আগে চারটি বিভাগেই একই দিনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বমোট ১০০ নম্বর নির্ধারণ করে। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষার জন্য ৪২, মৌখিক ৪০ এবং একাডেমিক রেজাল্টের জন্য ১৮ নম্বর নির্ধারণ করা হয়। পরীক্ষার পাসকৃত প্রার্থী এবং পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারীদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যে দশ জনকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হলেও ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। এমনকি লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সবাই মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তখনই সব প্রার্থী কীভাবে মৌখিক পরীক্ষায় সুযোগের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। এই বিভাগগুলোর নিয়োগ মেধার থেকে রাজনৈতিক বা আত্মীয়তার সম্পর্কই দেখা হচ্ছে বেশি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র শিক্ষক দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মেধাবীরা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হোক সেটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মেধাবীরা নিয়োগ পেলে তারা মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থেকে গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রমে বেশি যুক্ত থাকবে। যেটা রাজনৈতিক বিবেচনার প্রার্থীরা করবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের যাচাই করে মৌখিক পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সব নিয়োগে মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’